হালদা ফুটবল ক্লাব প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করছে চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত ইস্পাহানি চট্টগ্রাম মহানগরী পাইওনিয়র ফুটবল লীগ ২০২৩ (অনূর্ধ্ব-১৮)-এ। চট্টগ্রাম মহানগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনস মাঠে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। লীগের ক গ্রুপে হালদা ফুটবল ক্লাবের বিপক্ষ দল ছিল গতবারের চ্যাম্পিয়ন রামপুর একাদশ ফুটবল একাডেমী ও পাহাড়তলী একাদশ ক্রীড়া চক্র। নামে-ভারে দুই দলই এগিয়ে, যেহেতু হালদা এফসি এবারই প্রথম অংশ নিয়েছে।

২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হালদা ফুটবল ক্লাব মূলত উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির দল। তো এত দূর থেকে মহানগরে খেলতে আসা কেন? আর এসে লাভই বা হলো কী? যৌক্তিক প্রশ্ন। চলুন তাহলে জেনে নিই আমাদের লক্ষ্য ও প্রাপ্তির খতিয়ান:

প্রথম খেলা : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, বিপক্ষ : পাহাড়তলী একাদশ ক্রীড়া চক্র

ফলাফল:

হালদা ফুটবল ক্লাব ০-০ পাহাড়তলী একাদশ ক্রীড়া চক্র

টাইব্রেকারে পাহাড়তলী ৪-২ গোলে জয়ী

পাহাড়তলীর বিপক্ষে হালদা ফুটবল ক্লাবের শুরুর একাদশ

হালদা এফসি একাদশ: আজমির (১), ইমন দাশ (৪), ফরহাদ (৩), এমরান (৬), ইলিয়াস (১৩), মামুন (২০), আলিফ (১০), সাফওয়ান (৮), রাফি (১৬, রিশাদ (৭), মোমিন (১১)

বেঞ্চ: সাঈদ (১২), ইয়াছিন (১৪), আরিফ (৫), উৎসব (৯)

দ্বিতীয় খেলা : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, বিপক্ষ : রামপুর একাদশ ফুটবল একাডেমী

ফলাফল:

হালদা ফুটবল ক্লাব ০-৩ রামপুর একাদশ ফুটবল একাডেমী

রামপুরের বিপক্ষে হালদা ফুটবল ক্লাবের শুরুর একাদশ

হালদা এফসি একাদশ: আজমির (১), ইমন দাশ (৪), ফরহাদ (৩), এমরান (৬), আলিম (২), ইলিয়াস (১৩), মামুন (২০), আলিফ (১০), রাফি (১৬, রিশাদ (৭), মোমিন (১১)

বেঞ্চ: সাঈদ (১২), সাফওয়ান (৮), আরিফ (৫), মেহেদী (৯)


একটি কৈফিয়ত

একটি কৈফিয়ত দিয়ে শুরু করা যাক। চট্টগ্রাম মহানগরী পাইওনিয়ার ফুটবল লীগে অংশগ্রহণের জন্য যথারীতি হালদা ফুটবল ক্লাব মহানগরী ক্রীড়া সংস্থা বরাবর আবেদন করে। যেকোনো কারণে প্রথমে ঘোষিত মনোনীত ২৪টি দলের মধ্যে হালদা ফুটবল ক্লাব ছিল না। যদি ঘোষিত তালিকায় আমাদের নাম থাকত তবে আমরা দল গোছানোর এবং প্রস্তুতির সুযোগ পেতাম। পরবর্তীতে কোনো একটি দল ডিসকোয়ালিফাই হওয়াতে স্ট্যান্ডবাই দল হিসেবে আমাদের খেলার সুযোগ আসে। সসম্যা বাঁধে অন্য জায়গায়। দল গঠনের জন্য আমরা সময় পাই বর্ধিত সময়সহ মাত্র দুই দিন। দুই দিনে তথ্য ও কাগজপত্রাদিসহ খেলোয়াড় বাছাই করাটা মুশকিলের। তারপরও আমরা ক্লাবের যুব ইয়ুথ অ্যাকাডেমিসহ উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে খেলোয়াড় নিয়ে ১৭ জনকে নিবন্ধিত করতে পেরেছি।

আমাদের প্রাপ্তি

তালিকা করে প্রাপ্তির হিসাব করাটা কঠিন আমাদের জন্য। আমাদের বড় প্রাপ্তি প্রথমবার অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা। যেটি কাজে লাগিয়ে আমরা আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন লিগে/টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে ভালো ফল করার পরিকল্পনা করতে পারব। তারপরও কিছু পয়েন্ট যোগ করতে চাই-

বড় লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ

হালদা ফুটবল ক্লাব জন্মলগ্ন থেকেই উচ্চাভিলাষী। আমাদের লক্ষ্যটা বড়। আর সেটা হলো দেশের সর্বোচ্চ লিগ তথা বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে খেলা। আমরা ধীরে ধীরে সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে কাজ শুরু করেছি। তারই প্রথম পদক্ষেপ চট্টগ্রাম মহানগরী পাইওনিয়র ফুটবল লীগে অংশগ্রহণ। এর মাধ্যমে হালদা এফসি তার উপস্থিতি জানান দিলো।

অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের বড় মঞ্চে সুযোগ

যদিও আমরা দুটি ম্যাচের একটিও জিততে পারিনি তবুও আমাদের হালদা এফসি অ্যাকাডেমির নবীন আর তরুণ খেলোয়াড়েরা তাদের খেলোয়াড়ি জীবনে প্রথমবারের মতো মহানগরীর একটি লিগে খেলতে পেরেছে একটা তাদের জন্য মাইলফলক ও অনুপ্রেরণার হয়ে থাকবে। হয়তো এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে, জড়তা কাটিয়ে ভবিষ্যতে আরো বড় মঞ্চে খেলার জন্য সুযোগ পাবে আর নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবে।

ডিসিপ্লিন

হালদা ফুটবল ক্লাব প্রথমবার এ লীগে অংশগ্রহণ করেছে কিন্তু দেখে মনে হয়নি দলটি প্রথমবার এসেছে। মহানগরী ফুটবল সংস্থার বাইলজের কোনো ব্যত্যয় ঘটায়নি হালদা এফসি। জার্সি, প্যান্ট, মোজা, বুট, শিনগার্ডসহ কোনো বিষয়ে সমস্যা বা ঘাটতি ছিল না ডিসিপ্লিনারি ইস্যুতে, যেটির প্রশংসা করেছেন লিগের কর্মকর্তাসহ উপস্থিত দর্শকেরা।

ভালো খেলে হার

স্বল্প সময়ে দলের অন্তর্ভুক্তি সত্ত্বেও দলের খেলোয়াড়রা নিজেদের সামর্থের সবটুকু দিয়ে লড়াই করেছে। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে পাহাড়তলীর বিপক্ষে দলের ছেলেরা ‍দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলেছে। জয়ের জন্য চেষ্টা করেছে, দর্শকদের হাততালি পেয়েছে, শুধু কাঙ্ক্ষিত গোলটিই সোনার হরিণ হয়ে রইল। এ ম্যাচ থেকে প্রাপ্তি নির্ধারিত সময়ে ড্র করা। পরের ম্যাচটিতে রামপুরা দলটি খুবই শক্তিশালী ছিল। প্রথম গোলটি পেতেই পারত হালদা এফসি। কিন্তু কাউন্টার অ্যাটাক থেকে শুরুতে গোল খেয়ে যায়। তারপরও ঘুরে দাঁড়িয়ে দল বল দখল রেখে ভালো খেলেছে বলা যায়।

সব খেলোয়াড়ের গেম টাইম

নিবন্ধনকৃত ১৭ জন খেলোয়ড়ই কমবেশি গেম টাইম পেয়েছে এটি একটি বড় বিষয়। কেননা হালদা ফুটবল ক্লাবের লক্ষ্যই ছিল অ্যাকাডেমি ও উত্তর চট্টগ্রামের খেলোয়াড়দের নিজেদের প্রমাণ করার জন্য একটি মঞ্চ গড়ে দেয়ার। সেটি আমরা পেরেছি।

আরো বড় লক্ষ্যের প্রস্তুতি

প্রথমবার পাইওনিয়ার লীগে অংশ নিয়ে আমরা নিজেদের ঘাটতি জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি। ঘাটতিগুলো পূরণ করলে আগামী বছর এ লীগে চ্যাম্পিয়ন ফাইট দেয়া যাবে। বিশেষ করে আগামী বছর খেলোয়াড় বাছাইয়ে কাজে দিবে এ বছরের অভিজ্ঞতা। তাছাড়া যেসব খেলোয়াড় এ বছর প্রথমবারের মতো পাইওনিয়ার লীগ খেলেছে বয়স থাকা সাপেক্ষে তারা আগামী বছর হালদা ফুটবল ক্লাবের হয়ে খেলতে পারবে। বিশেষ করে কমবয়েসী খেলোয়াড়রা তাদের জড়তা কাটিয়ে আরো ভালো পারফরম্যান্স করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

অ্যাকাডেমির উপর ইতিবাচক প্রভাব

চট্টগ্রাম মহানগরী পাইওনিয়র লীগে অংশগ্রহণ হালদা ফুটবল ক্লাবের নিজস্ব অ্যাকাডেমি ‘হালদা এফসি অ্যাকাডেমি’র উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কেননা হালদা ফুটবল ক্লাব চট্টগ্রাম জেলায় তাদের উপস্থিতি জানান দিতে সক্ষম হয়েছে। তাতে করে অ্যাকাডেমির উপর এলাকাবাসীর আস্থা বাড়বে। হালদা এফসি অ্যাকাডেমির বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞ কোচ ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সাথে মহানগরী পাইওনিয়ার লীগে খেলার সুযোগ অ্যাকাডেমিতে নতুন ছাত্র ভর্তিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, যা ইতোমধ্যেই লক্ষ করা গেছে।


সর্বোপরি, আমরা একটা লীগে প্রথমবার অংশগ্রহণ করেছি। দুটি ম্যাচ খেলেছি। জিততে পারিনি একটাও। হয়তো এটাই বড় অপ্রাপ্তি। তাছাড়া অনভিজ্ঞতার ফলে আর্থিক ব্যাপারটি অফিসিয়ালদের ভুগিয়েছে। হালদা এবার কোনো স্পন্সর পায়নি। হয়তো আগামীবার ভালো স্পন্সর পাবে। অপ্রাপ্তির হিসাব যেহেতু করিনি সেহেতু সেসব কথা ভুলে সামনে আগানোই লক্ষ্য।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *